Thursday, September 17, 2020

পুরনো এক ইচ্ছে.....!

পুরনো এক ইচ্ছে.....!



৯০ দশকের এক তরুনী হলে বেশ হতো। বেনী দুলিয়ে শাড়ি পাট পাট করে পড়ে ক্লাসে যেতাম। গাঢ় করে কাজল দিয়ে হালকা করে পাউডার দিতাম। পাউডারটা শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতাম যাতে পাউডার দিয়েছি বোঝা না যায়। মাথায় হালকা সুগন্ধি তেল থাকতো হয়ত। বেল্টের কালো ঘড়ি থাকতো। আর হয়ত থাকতো ঝোলা ব্যাগ কিংবা হাতেই না হয় নিতাম বই-খাতা।

আমার এক পছন্দের বান্ধবী থাকতো মাঝেমাঝে ল্যান্ডফোনে ফোন দিতো। রাখতেই চাইতাম না ফোন। অনেকটা সময় কথা বলতাম আর হাসাহাসি করতাম। ক্লাসের লাজুক ছেলেটা হয়ত তাকে একটা চিঠি দিয়েছে চিঠির বানান ভুল নিয়ে হয়ত আমি হাসতাম। আর আমার বান্ধবী বলতো, 'হাসিস না তো...ছেলেটা বড্ড ভালো!' আমি বলতাম, 'কচু! তাহলে রাজি হয়ে যা!' কথা বলার ফাঁকে বাবা পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে গলা নামিয়ে ফিসফিস করে কথা বলতাম।

আমার একজন হয়ত প্রেমিক থাকলেও থাকতে পারতো। হয়ত আমাকে মাঝেমাঝে চিঠি পাঠাতো। চিঠি পড়তে পড়তে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইতো। আমার হাত-পা কাঁপতো। বেশি না চিঠিতে হয়ত শুধু লেখা থাকতো, 'রাত্রি কেমন আছো? আমার আজ মন ভালো নেই। তোমাকে গতকাল লাইব্রেরীতে দেখলাম।বেশ রোগা হয়ে গেছো। নিজের যত্ন নিও। তোমার দেওয়া লাইটারটা হারিয়ে ফেলেছি। মন খারাপ করো না। ভালো থেকো।' হাজার খানেকবার চিঠিটা পড়তাম।তারপর চিন্তা করতাম। কোথায় লুকিয়ে রাখবো এটাকে। আমার হয়ত একটা বাক্স থাকতো। সব চিঠি জমতো সেখানে। হয়ত আমি সেলাই করতাম। এই মনে করেন "ভুলো না আমায়" কিংবা "মনে রেখো" টাইপ কিছু।

বাবা অফিস থেকে আসলে খুব যত্ন করে চা বানিয়ে দিতাম, সাথে নিমকি। অবসরে সুনীল কিংবা শীর্ষেন্দুর বই নিয়ে মেঝেতে আঁচল বিছিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়তাম। রেডিও শুনে শুনে হৈমন্তী শুক্লার গানগুলো গলায় তুলতাম। মদীনাবাসী প্রেমে ধর হাত মম শুনে চোখে পানি চলে আসতো...

আমার নব্বই দশকের এক তরুনী হতে ইচ্ছে করে, ভেজা চুলে গামছা পেঁচিয়ে বারান্দায় দাঁড়াতে ইচ্ছে করে। সাদা নীল আকাশ দেখতে ইচ্ছে করে। এই সময়টা আমার ভালো লাগে না। নীল সাদা ফেসবুকে আকাশের ছায়া দেখতে একদমই ভালো লাগে না...

~Sabrina Nusrat Reza Tushi

pc:- shahed ahamed siam

No comments:

Post a Comment