Thursday, September 17, 2020

সত্যিকারের ভালোবাসা গুলা হয়তো এমনি হয়.....!

সত্যিকারের ভালোবাসা গুলা হয়তো এমনি হয়.....!



রিক্সায় গেলে ভাড়া ২০ টাকা, আর অটোতে ১০ টাকা। তাই অটোর জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু পাচ্ছিলাম না

পাশেই অনেকগুলো রিক্সা দাঁড় করানো।

তাদের মাঝে একজন বলল -

রিক্সাওয়ালা- ভাইয়া যাবেন ? চলেন।

আমি- না।

রিক্সাওয়ালা- একটু অপেক্ষা করে আবার ডাক দিয়ে বলে ভাইয়া চলেন।

আমি- (একটু বিরক্ত হয়ে) বল্লামনা যাব না।

রিক্সাওয়ালা - আপনি ১০ টাকাই দিয়েন। চলেন।

আমি - তাকিয়ে লোকটা কে একটু ভালোভাবে দেখলাম। খারাপ কিছু মনে হয় নি। তাই উঠে পড়লাম।

নামলাম, ভাড়া দিলাম, তারপর একটা দোকানে ঢুকে গিয়েছি। কিছুক্ষন পর বের হয়ে দেখি রাস্তার ঐ পাশে রিক্সাওয়ালা মামা টা। ফুল কিনছে.. হাতে দুইটা বিরিয়ানির প্যাকেট। আমি কেন জানি ওনার পাশে চলে গেলাম। গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ওনি আমাকে দেখতে পেয়ে একটা হাসি দিল।

আমি- মামা ফুল কার জন্যে ?

রিক্সাওয়ালা- আপনের ভাবীর লাইগ্যা। আইজকা বিবাহবার্ষিকী।

আইজকা আর ভাড়া মারতাম না,বাসায় চইল্লা যামু।

১৬০ টাকা লাগতো। আমার কাছে ১৫০ ছিল। এরলাইগ্যা আপনেরে ১০ টাকা দিয়াই নিয়া আইছি।

আমি- মিরপুর যাবেন ?

রিক্সাওয়ালা - না, আইজকা আর ভাড়া মারতাম না।।

আমি- আরে চলেন মামা, আপনাকে ১০ টাকা বাড়াই দিব। এইটা বলেই আমি ওনার রিক্সায় বসে পড়েছি।

ওনি ও আর না করে নাই। নিয়ে আসছে মিরপুর।

আসার পথে

আমি- আজকে শুধু ১৬০ টাকাই ভাড়া মারছেন?

রিক্সাওয়ালা- না, আরো বেশি। মালিক রে টাকা দিতে হইবো। ওইটা বাদ দিয়া ১৬০ টাকা।

আমি- ভাবী রে কি প্রতি বছর ই ফুল দেন ?

রিক্সাওয়ালা - হ্যাঁ। ১২ বছর ধইরা দেই। বছরে দুইবার। একদিন বিবাহবার্ষিকী কে। আরেক দিন হইলো এপ্রিল এর ২ তারিখ। ওইদিন আমার মাইয়া হইছে। আমরার প্রথম সন্তান। খালি বিয়ার ১ম বছরে দিতে পারি নাই। তহন বেকার ছিলাম। হাতে কোনো কাম ছিল না।

আমি- বয়স কত আপনার মেয়ের ?

রিক্সাওয়ালা - ৯ বছর।

রিক্সা থেকে নেমে ওনাকে ১০০ টাকার দুইটা নোট দিয়ে বলেছি এইটা দিয়ে ছোট দেখে একটা কেক ও নিয়ে যাইয়েন। দোকানদারকে বইলেন কেক এর উপরে লিখে দিতে - শুভ বিবাহবার্ষিকী।

ওনি একদম চুপচাপ হয়ে অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিল।

তার থেকেও বেশি অবাক ছিলাম আমি।

ওনার প্রত্যেকটা কথা অবাক হয়ে শুনছিলাম।

কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ মনে পড়লো আরে আমার ব্যাগে তো মোমবাতি আছে। ওনাকে একটা মোমবাতি দিলে ভালো হতো।

তারপর মনে হলো - ভালোই করেছি মোমবাতি না দিয়ে। মোমবাতি দিলে তো ওরা ঐটা ফু দিয়ে নিভিয়ে দিত। এই ভালোবাসা না নিভুক। এমন ভালোবাসা গুলো জ্বলতে থাকুক বারো বছর, চব্বিশ বছর,শত বছর, হাজার বছর ধরে।

অনেক কেই তো দেখি নিজের সন্তান এর জন্মদিন পালন করতে। কিন্তু সেই সন্তান কে যেই মা পৃথিবীতে এনেছে সেই মাকে সন্তানের প্রতি জন্মদিনে কয়জনই বা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়..................

সত্যিকারের ভালোবাসা গুলা হয়তো এমনি হয়।


 

No comments:

Post a Comment