সেঁওতি
দিনকাল খুব ভালো যাচ্ছে না। কেন দিন ভলো যাচ্ছে না সেটা খোজার অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই ভালো না বেটার সাথে পেরে উঠে পারতেছিলাম না। সেই প্রতিদিনের মতো আজও সকালের সন্ধ্যা বেলায় উঠলাম মানে ঐ ১১ টার দিকে আর-কি। যাইহোক দিন টা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে আছে, মনে হচ্ছে কেউ একজন বড় একটা চামিচ নিয়ে আকাশ টাকে ঘোলা বানাচ্ছে। এই যে উঠতে না উঠতেই বক-বক করা শুরু করেছি, কাজ কাম নাই ত খুব একটা তাই আরকি বকবক টা বেড়ে গেছে। তবে আজ একটু কাজ আছে, কাজটা অনেকের কাছে কোন কাজ মনে না হলেও আমার কাছে এর চেয়ে বড় কোন কাজ নেই, কাজটা হচ্ছে সেঁওতি কে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। ওহহ দুঃখিত সেঁওতি সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় নি। সেঁওতি হচ্ছে আমার পার্ট টাইম প্রেমিকা। পার্ট টাইম ভেবে ভাবনেন না আমার আরো প্রেমিকা আছে। একটাই আমার কাছে বেশি হয়ে যায় অর্ধেক থাকলে মনে হয় আর একটু ভালো হতো। ওহহ নো,, আমি ত আমার পরিচয় ই দেই নাই। থাক আমার পরিচয় না ই দেই। কি করবেন এই অকর্মার পরিচয় দিয়ে। যাই হোক কাজে ফিরে আসি।
_মেছ থেকে ফিটফাট হয়ে বের হলাম, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ০১ঃ৫০ বাজে। এখন হাজী বাড়ী মোড়ে দাড়িয়ে খালি একটা রিক্সা খুজতেছি,
- ঐ মামা যাবা?
- হ যামু
- কই যাবা?
- আপনি যেনে যাবেন! (একটু হেসে)
- কত?
- যাবেন কই ?
- কাচারি ঘাট
- ওঠেন
- কত?
- ৪০ টেহা
- না, ২৫ টাকা দিমু
- যাইন ৩০ টেহা দিয়েন।
আর কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লাম।
মনে মনে ভাবতেছি সেঁওতিকে জিলা স্কুল মোড় থেকে রিক্সায় উঠিয়ে একসাথে যাব। কিন্তু মোড়ে ওকে পেলাম না। ও জানে আমি পন্ডিত পাড়া হয়েই যাব তাই ও পন্ডিতপাড়া রাস্তা হয়ে ধীরে ধীরে হেটে যাচ্ছে,
ওকে দেখে আমার ডিসিশন চেঞ্জ হয়ে গেল আস্তে আস্তে রিক্সার ছাউনিটা তুলে নিয়ে একটু লোকানোর চেষ্টা করলাম। যে আমি একাই যাব ও হেঁটে হেঁটেই আসুক।
কিন্তু সেই মেয়ে মানুষের চোখ,, লোকানোর প্রচেষ্টা বিফল। রিক্সার আওয়াজ শুনেই পিছন ঘুরে দেখল আমি, আর ওমনেই মামা কে থামিয়ে ওঠে পড়ল রিক্সায়, ছাউনি নিচে নামিয়ে দিলাম। এখন আরেক বিপদ আমি মামাকে বলছিলাম যাব কাচারি ঘাট, নাহ্ এখন সে পার্কে যাবে, আমি বললাম তাহলে কাচারি ঘাটে নেমে দুজন নদীর পাড় দিয়ে হেটে হেটে পার্কে যাব। না সে মানবেই না।
এই জন্যে মেয়ে মানুষ নিয়ে ঘুরতে যাওয়া এক প্রকার ভালো মানুষের অভিশাপ। গেলাম পার্কে।
রিক্সা থেকে নামতে না নামতেই এক পিচ্চি এসে হাজির,
- আপু ১০ টা টেহা দেইন
আমি বললাম আমি দেই, পিচ্চিও ফাজিল আমার কাছ থেকে নিবে না। আমি বললাম আপু কাছে কোন টাকা নাই! না আছে আপু দেইন আপু দেইন।
কি আজব আমি দিতে চাইতেছি আমার কাছ থেকে নিবেই না কিন্তু আপুর কাছ থেকে নিবে। যাইহোক তারা কোন ভাবে বিদায় হলো।
এখন সময় ০২ঃ৩৫। দিনটা সকালের মতো এখনো একটু ঘোলাটে ঘোলাটে নদীর পাড়ে তা আরো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আর প্রচুর ঠান্ডা বাতাসে সেঁওতির চুল গুলো উড়ে আমার মুখের সাথে বারবার বারি খাচ্ছে।
মনে হচ্ছে ভারি বৃষ্টি হবে। কিছুদূর যেতেই বৃষ্টি শুরু হবে এমন একটা ভাব চলে এসেছে মুহুর্তেই আকাশ কালো অন্ধকার হয়ে গেল। মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমরা প্রায় হিমু আড্ডার কাছা কাছি এসে পড়েছি ওমনেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমরা দুজনই হিমু আড্ডা ভিতরে প্রবেশ করলাম। আমি ভিতরে একটি চেয়ারে বসে আছি আর সেঁওতি চেয়ার থেকে উঠে নদী পাড়ের জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আমিও তার পিছু পিছু গিয়ে ওর হাতটি ধরে দাড়িয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি সে কি ভয়ংকর সুন্দর দৃশ্য!
এক মাঝি নদীর ঐপাড় থেকে এই পাড়ে আসছিল ঠিক মাঝ বরাবর আসলেই বৃষ্টি নেমে পড়ে তার সাথে এক অপূর্ব ভয়ংকর বাতাস যা মাঝিকে বারবার পিছনের দিকে ঠেলে নিচ্ছে।
সেঁওতি এসে আবার চেয়ারে বসল। দুইটা কফির অর্ডার দিল। আমি বললাম একটি কফি, একটি চা। কি অদ্ভুত এখানে চা পাওয়া যায় না। কি করার কফিই খেতে হবে। বিল ত আর আমাকে দিতে হবে না!
অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি তার সৌন্দর্য ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। হালকা হালকা এখনো বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তার ল্যাপপোষ্ট গুলো আলোকিত হয়ে গেছে অর্থাৎ সন্ধ্যা নেমে এসেছে। মাগরিবের আজান হচ্ছে। একটু দৌড়িয়ে গিয়ে একটা রিকশায় উঠে বসলাম। সার্কিট হাউজ মাঠের রাস্তা ধরে টাউন হলের দিকে যাচ্ছি। মেইন রাস্তায় উঠতেই মুক্তাগাছা টু ময়মনসিংহ গামী পালকি গাড়ির সাথে আমাদের রিকশার সংঘর্ষ । সেঁওতি রিকশা থেকে রাস্তার ঠিক মাঝখানে পড়ে গেল। আমি হঠাৎ করেই চমকে উঠলাম। সব কেমন জানি নীরব হয়ে গেছে, আমি কারো অাওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না।
মনে হচ্ছে দূরে কোথায় ফোন বাজতেছে। ঠিক এমন সময় রবিউল ভাই ডাকতেছে,, _ আসিফ, আসিফ উঠ তোর ফোন বাজতেছে। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখি ঠিক ১১ টা বাজে। সেঁওতি ১৩ বার কল দিয়েছে।
আল হাদী🥀
No comments:
Post a Comment