This is Law of natural selection
রেজাউল স্যারকে চিনতাম। হোস্টেলের পুকুর ঘাটে বসে বিড়ি টানত আর বলত :: বুঝেছ রব, নিজের চেয়ে কাউকে ভালবেস না, মেয়েরা ফেন্সিডিলের মত। একবার মায়ায় পড়েছ তো নিজেকে শেষ করেছ।
৪৩ বছর বয়সে স্যার তখনও বিয়ে করেননি। নিজ গ্রামের
এক মেয়েকে ভালবাসতেন। রাজশাহী ভার্সিটিতে পড়ার সময় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়। স্কুল
পড়ুয়া দুই ছেলে সহ মেয়েটা এখন প্রায় মধ্যবয়সী। মাঝে মাঝে রাতে ঘুরতে বের হতাম।
একটা ছোট্ট গোল আলো অন্ধকারে উঠানামা করলেই বুঝতাম স্যার একা বসে বিড়ি খাচ্ছে।
কাছে ডেকে গল্প করতেন। প্রায় দিন ঐ মেয়েটার গল্প শুনতাম। একটি বাগানের গল্প,
কান্নাকাটির গল্প। ভাবতাম এতকাল পরে একটি মেয়েকে মনে রাখার মত মানুষ ও আছে তাহলে।
মেয়েটার সংসার হয়েছে, বাচ্চা হয়েছে।
কাউকে ভালবাসলে সমগ্র প্রান দিয়ে ভালবাসে, কোন
কারনে তাকে ঘৃনা করলে স্বর্বস্ব দিয়ে ঘৃনা করে। আপন পরের ব্যাপারটায় চরম ধরনের
নিষ্ঠুরতা থাকে।
মেসেজ গুলো তাকে পোড়ায়। খুব ধীরে সে বুঝে ফেলে জীবনের একটি অংশ সে হারিয়ে ফেলেছে, যাকে ছাড়া সে অচল। হারানো মানুষ টাকে ফিরে পেতে সে তখন যুদ্ধ শুরু করে, তবে দেরি হয়ে যায়। ততদিনে মেয়েটার কাছে সে অচেনা কেউ। হতাশা আকড়ে ধরে তাকে। সিডেটিপের ডিব্বা তার আশ্রয় হয়ে যায়। নিজের প্রতি বেখেয়ালে কখন যে বনমানুষ হয়ে যায় বুঝতে পারে না। হাউমাউ কান্নাটা মানুষের শেষ আশ্রয়। বিধাতা এটিও তাকে দেয় নি। কিছুদিন আগে প্রায় মাঝরাতে একটা ছেলে এসেছিল আমার কাছে ( ইমার্জেন্সিতে)। প্রায় বদ্ধ নেশাখোর। হাতের কোথাও ইনজেকশন দেয়ার শিরা নাই। সব শিরায় সে নিজে ইনজেকশন দিয়েছে। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার সময় মোবাইলে একটি মেয়ের সাথে পরিচয়। তারপর প্রেম, অত:পর ব্রেক আপ। ঘটনা ২০১১ সালের। প্রবাসী একটি ছেলেকে বিয়ে করে স্বামী বাচ্চা নিয়ে ভালোই আছে মেয়েটি। শুধু এই পাগলটার রাত কাটে না। মাঝে মাঝে ইমার্জেন্সি তে দেখা যায়। ছেলেটার বাবা ব্যাবসায়ী। ভদ্রলোক প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল:: স্যার ওর বিয়ে ঠিক করেছি। তার পর থেকে আবার শুরু করেছে। কিছুদিন ভালছিল। সেনাবাহিনীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এ চাকুরী দিয়েছি। এরকম করলে চাকুরীটাও চলে যাবে।
ছেলেটাকে দেখে বহুদিন আগের রেজাউল স্যার কে মনে পড়ল। মানুষ তাহলে এমনও করে!! ভালবাসায় পাপ কতটুকু জানি না, তবে প্রায়াশ্চিত্ত অনেক বড়। ভালবাসা কাউকে কাউকে ঋনী করে ফেলে , আর কেউ কেউ সেটা জীবন দিয়ে শোধ করে।
সস্তা ভালবাসার যুগে মানুষ ভালবাসে একজনকে, আর প্রেমে পড়ে দশ জনের। এগুলোর নাম দিয়েছে ক্র্যাশ। ভালবাসা ছুটে গেলে এগুলোর দিকে হাত বাড়ায়। এই ক্র্যাশের যুগেও আপাত কঠিন কিছু মানুষ থাকে। এরা lock সিস্টেমে ভালবাসে। শুধু বাসতেই জানে, ভুলতে শিখে না। এরা হয়ত দার্শনিক হয়ে যায়, নয়ত মাঝ রাতে হুটহাট করে ইমার্জেন্সিতে চলে আসে।
-ডাঃ আব্দুর রব
No comments:
Post a Comment